সেদিন বিকেলে হাওড়া স্টেশনে যেতে হয়েছিল, এক আত্মীয়কে বিদায় জানাতে। আমার সঙ্গে ছিল আমার এক বন্ধু এবং তার ভাগ্নে। ভাগ্নের বয়স ১২-১৩ বছর। বাড়ি উত্তরবঙ্গে। মামারবাড়ি বেড়াতে এসেছে। সে বলল, “মামা আমি কোনোদিন গঙ্গায় লঞ্চে চড়িনি। চড়ব।“
ছেলেমানুষের আবদার শুনতে হয়। তাকে নিয়ে লঞ্চে চেপে হাওড়া থেকে বাবুঘাটে এলাম। তারপর তিনজন হাঁটতে হাঁটতে, ধর্মতলার দিকে আসছি। মোহনবাগান তাঁবুর কাছে এসে বললাম, “এই দ্যাখ এটা জাতীয় ক্লাবের তাঁবু। প্রণাম কর।”
ছেলেটা মুখ ভোঁতা করে বলল, “রাখো তোমার জাতীয় কেলাব। আমি ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার। আমাদের তাঁবুটা কোথায় দেখাও।” আমার বন্ধু বলল, “আর বলিস না, আমার দিদির বাপের বাড়ি লোটা। ভাগ্নেটাও লোটা তৈরি হয়েছে।” ভাগ্নে বলল, “অত কথা বুঝি না। ইস্টবেঙ্গল দেখাবে কি না বল?”
আমি বললাম, “দেখবি কী করে? আমাদের ক্লাব বড় রাস্তার উপরে তাই সবাই দেখতে পায়। তোদের ক্লাব তো গলির ভিতরে।” ভাগ্নে তবু বলে “দেখব। গলির ভিতরে গিয়েই দেখব।” আমি বললাম “দ্যাখ, আমার তো একটা মানসম্মান আছে। যদি কেউ দেখে ফেলে যে ইস্টবেঙ্গলে যাচ্ছি, তখন সবাই প্যাঁক দেবে।”
ভাগ্নে বলল, “এখন তো প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। এখন গেলে কেউ তোমাকে দেখতে পাবে না।” ভেবে দেখলাম, বাচ্চা ছেলে এত করে বলছে। যাই নিয়ে যাই। কেলাব দেখে ভাগ্নে তো মহাখুশি। চোখ বড়বড় করে দেখছে। কিন্তু ফোর্ট উইলিয়ামের দিকে কয়েক পা যেতেই যে কাণ্ড হল, তা আর কহতব্য নয়।
আশপাশের গাছগাছালি থেকে দুজন মহিলা বেরিয়ে এল। তাদের মুখে চড়া মেকআপ। ফিনফিনে শাড়ি। হাতকাটা ব্লাউজ। মাথায় ফিতে। শাড়ি নাভির একহাত নীচে নামানো। একজন বলল, “কোথায় যাচ্ছিস রে?” ভাগ্নে বলল, “ইস্টবেঙ্গল ক্লাব দেখতে।” শুনে সেই মহিলা হেসে গড়িয়ে পড়ল। অন্যজন বলল, “চলে যা বলছি। চলে যা। সন্ধ্যের সময় এই তল্লাটে এসেছিস একটা বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে?” আমরা আমতা আমতা করে বললাম, “জানতাম না।” প্রথম মহিলা বলল, “এসেছে যখন কিছু খিঁচে নাও না।” দ্বিতীয়জন বলল “সঙ্গে বাচ্চা আছে ছেড়ে দে।”
ভাগ্নেকে পইপই করে বলেছিলাম, বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু বলবি না। কিন্তু ছেলেমানুষ, চেপে রাখতে পারেনি। তাই বেজায় মুখঝামটা শুনতে হল। সবাই বলল, “তোরা জানিস না, সন্ধ্যের সময় ওই এলাকায় কী কী কারবার হয়?”
তোমাদের কারোর যদি এই গল্প বিশ্বাস না হয়, যে কোনোদিন সন্ধেবেলায় বেলায় লোটা কেলাবের কাছাকাছি ঘুরঘুর করে দেখো। তবে গেলে নিজের রিস্কে যাবে। আমাদের সঙ্গে বাচ্চা ছিল বলে ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদের কোনও বিপদ হলে আমি দায়ী নই।
No comments:
Post a Comment